অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, জি-সেভেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে তেলের মূল্যসীমা নির্ধারণ করেছে তা মানবে না তার দেশ। নোভাক বলেন, বেঁধে দেয়া মূল্যসীমা এড়িয়ে বিকল্প পথে কিভাবে তেল বিক্রি করা যায় তার কৌশল উদ্ভাবনে কাজ করছে মস্কো।
সম্প্রতি শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-সেভেন এবং অস্ট্রেলিয়া গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো দেশ প্রতি ব্যারেল তেল ৬০ ডলারের বেশি দামে কিনতে পারবে না। যদি কোনো দেশ এই দামের বেশি অর্থ দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করে তাহলে সেই দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জি-সেভেন। এছাড়া, পশ্চিমা যে সমস্ত দেশ সামুদ্রিক জাহাজের ট্যাংকারের বীমা করে থাকে তারাও বিমার নিশ্চয়তা দেবে না।
জি-সেভেনের বেধে দেয়া এই মূল্যসীমা মেনে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শনিবার এক বৈঠকের মাধ্যমে ইউরোপীয় কাউন্সিল এই মূল্যসীমার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। রাশিয়ার তেলের যে দাম ঠিক করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের দামের চেয়ে শতকরা পাঁচ ভাগ কম।
জি-সেভেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেলের মূল্যসীমা ঘোষণার পর রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, যেসব দেশ এই দামে তেল কিনতে চাইবে তাদের কারো কাছে মস্কো তেল সরবরাহ করবে না। মস্কো শুধুমাত্র সেই সব দেশের কাছে তেল বিক্রি করবে যারা জে-সেভেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঠিক করে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনতে আগ্রহী। আলেকজান্ডার নোভাক বলেন, “আমরা বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে তেল বিক্রি করব, এমনকি তেলের উৎপাদন কমিয়েও দিতে পারি।”
রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমাদের ঠিক করে দেয়া এই তেলের মূল্যসীমা আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক। রাশিয়া এই মূল্যসীমা অকার্যকর করে ভিন্ন পথে কিভাবে তেল বিক্রি করতে পারে তার কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে।
ভৌগোলিক কারণও দায়ী তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতার পেছনে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, গ্রামীণ পরিবেশে বসবাসকারী শিশুরা যত্নের অভাবে উচ্চতর ঝুঁকিতে থাকে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে। উপজাতি সম্প্রদায়ের যুবকরা অন্য যে কোনো গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়। আলাস্কায় প্রতি লাখে তরুণদের বার্ষিক আত্মহত্যার হার ৪২ শতাংশ। যে কোনও রাজ্যের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ এবং জাতীয় হিসাবে গড়ে চারগুণ বেশি।
শুধু আমেরিকাতে নয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও মেক্সিকোসহ আরও অনেক দেশেই গত কয়েক দশকে তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে নিয়ে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছয়জনের মধ্যে একজনের মানসিক-স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা আছে। যেখানে ২০১৭ সালে তা ছিল নয়জনের মধ্যে একজনের। বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কিত একটি জার্নালের তথ্য বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কিশোরদের একাকীত্ব বেড়েছে ৩৭টি দেশের মধ্যে ৩৬টিতে।
দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলেও ব্যতিক্রমী ঘটনা হচ্ছে, আমেরিকায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। যদিও ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। ২০২১ সালে সেখানে প্রতি এক লাখ যুবকদের মধ্যে ৬ দশমিক ৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যেখানে আমেরিকান তরুণ ১১ দশমিক ২ শতাংশ এ ধরনের পথ বেছে নেয়।
আমেরিকায় বন্দুক হাতে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আত্মহত্যার জন্য ছেলেদের একটি সাধারণ ব্যাপার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা। যে কারণে সহজে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কেন ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি বন্দুক হামলায় মারা যায়। সুইজারল্যান্ডে, ২০০৩ সালের পর সামরিক-সার্ভিসে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার দ্রুত কমে যায় যখন দেশটি তার সেনাবাহিনীর আকার অর্ধেক করে দেয়। যেখানে প্রায়শই সৈন্যদের অস্ত্র বাড়িতে নিয়ে যেতে হতো। মহামারি চলাকালীন আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে। যার দরুণ ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু এবং বাড়িতে বন্দুক আছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে আমেরিকানদের আত্মহত্যা বৃদ্ধির জন্য বন্দুকই দায়ী।
তবে এই গল্পে শুধু বন্দুকই একমাত্র অংশ নয়। অন্যান্য কারণ যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব, জলবায়ু-পরিবর্তন নিয়ে হতাশাও প্রভাব ফেলে এতে। তাছাড়া আরও কিছু কারণ আছে, তরুণরা তাদের পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত সেটিও মুখ্য হয়ে ওঠে। সিডিসি বলছে, যে সব শিশু স্কুলে অবাধে মেলামেশা করে তাদের মানসিক জটিলতার মধ্যে পড়ার শঙ্কা ক্ষীণ এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও ৫০ শতাংশের কম।
এই প্রতিরক্ষামূলক স্তর ভীতি তৈরি করতে পারে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাথরিন কেইস বলেন, ‘কিশোরকালীন কার্যক্রমের ধরন যা সেই সামাজিক সংযোগের নির্দেশক হয়, বা আপনার সামাজিক বৃত্তে আশপাশের পরিবেশ ও অনুভূতি এমনভাবে তৈরি করবে যা কাঠামোগতভাবে পরিবর্তিত হয়।
আগে টিনএজাররা সনাতন পদ্ধতিতে যোগাযোগ বজায় রাখতো, যেমন খেলাধুলা, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। ১৯৭০ এর দশকে ১২তম ক্লাসের শিক্ষার্থী প্রতিদিনই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতো। ডক্টর কেইস গবেষণায় নিম্ন স্তরের সামাজিক কার্যক্রম ও বিষণ্নতার রিপোর্টের মধ্যে একটি সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন।
একটি বিতর্ক জিইয়ে আছে, তা হলো সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের বিচ্ছিন্ন করে নাকি সংযোগের জন্য একটি নতুন বিকল্প তৈরি করে। স্কুলের পরিবেশের মতোই, অনলাইন অভিজ্ঞতা শিশুদের সাহায্য বা ক্ষতিও করতে পারে। সিডিসির তথ্য বলছে, কোভিডের সময় সহকর্মী, পরিবার বা অন্যান্যদের সম্পৃক্ততা স্কুলে লোকদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভূতির মতোই প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলেছিল। সামাজিক মাধ্যমগুলো সে সময় তাদের কম একা বোধ করা থেকে বিরত রেখেছিল। তবে এটি আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেমন ১৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ মলি রাসেলের আত্মহত্যার সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। সামাজিক-মিডিয়ার ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু তার মৃত্যুর জন্য দায়ী, বলে উপসংহারে এসেছে।
Leave a Reply